ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

অভিযানেও থেমে নেই ডেন্টাল-প্যাথলজি বাণিজ্য

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার ::
অভিযানে ও বন্ধ করা যাচ্ছেনা অবৈধ প্যাথলজি এবং ডেন্টাল চিকিৎসার রমরমা বানিজ্য। অভিযান চালানোর কিছু দিনের মধ্যেই পুনরায় গজে উঠে এ সব ব্যবসা। গত বছর শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত ডেন্টাল ক্লিনিকসমুহে ভ্রাম্যমান আদালত ‘অনুমোদনহীন ডেন্টাল ক্লিনিক’ বন্ধে অভিযান চালিয়ে ৭টিকে সিলগালা করে দেওয়ার ৮ মাসের মধ্যে পুনরায় ক্লিনিকগুলো চালু করে মালিকেরা। অভিযোগ রয়েছে সিভিল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মচারির সাথে লেনদেনগত সম্পর্কের কারনে এসব ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করতে  কোন সমস্যায় হয়না মালিকদের। গেল সপ্তাহে হাসপাতাল সড়ক ও পানবাজার রোডে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ডায়গনেষ্টিক সেন্টার শেভরনসহ ৩টি ফামের্সিকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। তাতে সমস্যা সমাধান হয়নি। এরচেয়ে ও নি¤œমানের ভুল রিপোর্ট দেওয়া অর্ধ শতাধিক ডায়গনষ্টিক সেন্টার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চিকিৎসকদের কমিশন বানিজ্যে চলছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলমের মাতার ভুল রিপোর্টের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। শহরের ল্যাবগুলো কিভাবে চলছে তার খবরাখবর নেয়া শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এতে বেরিয়ে আসে নি¤œমানের ডায়গনষ্টিক সেন্টার, টেকনেশিান ছাড়া ভাড়াটে লোক দিয়ে ভুল রিপোর্ট করানো, নামকরা চিকিৎকদের মোটা অংকের কমিশন বানিজ্যের বিষয়টি। কয়েকজন চিকিৎসকের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শহরের অভ্যন্তরে মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে নতুন প্যাথলজি গজিয়েছে ৫টি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধুমাত্র কতিপয় চিকিৎসকের কমিশনের ভিত্তিতে উক্ত ডিজিট্যাল সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিকসমুহ গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট, ইচ্ছেমত ফি আদায় সহ হাজারো অনিয়মের মধ্যে চলছে জেলার প্রায় ৭০টি প্যাথলজি তথা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল চিকিৎসা কেন্দ্র । ল্যাব ইনচার্জের নামের পাশে নানাসব উচ্চতর ডিগ্রি বসিয়ে সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অথচ অনেক ল্যাব টেকনেশিয়ানের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পর্যন্ত গড়ায়নি। কোন ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ল্যাব খুললেও কারো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত নেই। তবে আশার কথা হল অনেক দিন পর প্রশাসন নজর দিয়েছে এসব অবৈধ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে। গত বছর ৮ নভেম্বর ভ্রাম্যমান আদালত শহরের হাসপাতাল সড়কে অভিযান চালিয়ে ৬টি অবৈধ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করার পর ও এসব সেন্টার বন্ধ হয়নি। চলছে পুরোদমে।
এদিকে অবৈধ এ সব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কারনে ভুল পরীক্ষায় জীবনহানি ঘটছে অনেক রোগীর। প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে শত শত রোগি। রোগিকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে কমিশনের জন্য নির্দিষ্ট প্যথলজিতে পাঠাচ্ছেন ডাক্টাররা। ডাক্টারদের পছন্দসই প্যথলজিতে না গেলে রোগিদের নানা হয়রানির ঘটনা ঘটছে।  সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরের হাট বাজারে স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন অনুমোদনহীন প্যথলজি। এ সব অবৈধ ল্যাব বন্ধে গত ২ বছরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অন্তত ১ হাজার নোটিশ পাঠানোর পরও থামানো যাচ্ছেনা এসব ভুঁয়া ল্যাব ব্যবসা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৭০টি প্যাথলজি সেন্টারের নাম থাকলেও তৎমধ্যে ৩৬টির লাইসেন্স নেই। ৩৩টি প্যাথলজিকে বন্ধের জন্য সাড়ে ৪ বছর আগে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করলেও অদ্যাবধি ৩৩টি প্যাথলজি বহাল তবিয়তে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হল বৈধ প্যাথলজির দুই তৃতীয়াংশের মালিক অর্থলোভী কতিপয় চিকিৎসক। ভূঁয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে দক্ষ প্রশিক্ষিত টেকন্যাশিয়ানের নাম করে কতিপয় প্যাথলজি চলছে এ সব চিকিৎসকদের কমিশনের জন্য।
অপরদিকে গতবছর ৯টি ডেন্টাল ক্লিনিককে সিভিল সার্জন অফিস থেকে বন্ধের জন্য নোটিশ পাঠালে ও অদ্যাবধি বন্ধ হয়নি উক্ত কালো তালিকাভুক্ত ডেন্টাল ক্লিনিক সমুহ। নোটিশের তোয়াক্কা না করে দিব্যি চলছে এ সব ডেন্টাল সেন্টার। গতবছর ৬ জুলাই সিভিল সার্জন অফিস থেকে কালো তালিকাভুক্ত করে নোটিশ দেওয়া এ সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমুহ হল হাসপাতাল সড়কের ডিজিটাল ডেন্টাল পয়েন্ট, ডেন্টাল সার্জারি, ফ্যামিলি ডেন্টাল সেন্টার, কক্স ডেন্টাল সেন্টাল, মর্ডান ডেন্টাল হাউজ, ওরাল ডেন্টাল, মুমিন রাজুধনন্তরি ডেন্টাল কেয়ার ।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত সিভিল সার্জন কর্তৃক কালো তালিকাভূক্ত ও সাড়ে ৪ বছর আগে বন্ধের নোটিশপ্রাপ্ত প্যাথলজি সমূহ হলো ঈদগাঁও বাজারের জয় প্যাথলজি, সী হার্ট মেডিকেল সেন্টার, হাসপাতাল সড়কের ফেমাস প্যাথলজি, ঈদগাঁও ডিসি সড়কের ডেন্টাল কেয়ার।
চকরিয়া উপজেলার কালো তালিকাভূক্ত প্যাথলজিসমূহ হল হেফজখানা সড়কের সেবা ল্যাব, মা মনি ফার্মেসী সংলগ্ন মা মনি প্যাথলজি, ফজল ফার্মেসী সংলগ্ন খুটাখালী প্যাথলজি সেন্টার, ডুলাহাজারা বাজারের মজুমদার মার্কেট সংলগ্ন নিউরণ ল্যাব, জীপ স্টেশনের এস এম প্যাথলজি, লালমিয়া মার্কেটের সাজেদা ড্রাগ হাউস, ডুলাহাজারা ল্যাব হাউস, খুটাখালীর গ্রামীণ ল্যাব, মালুমঘাটের মেডি ল্যাব।
রামুর চৌমুহনীর জননী প্যাথলজি, হাসান দন্ত চিকিৎসালয়, হাসপাতাল সংলগ্ন এম রাজা দন্ত চিকিৎসালয়। উখিয়ায় কালো তালিকাভূক্ত অবৈধ প্যাথলজি ব্যবসার চারণ ক্ষেত্র।
গেল সাড়ে ৪ বছরে ৩ জন সিভিল সার্জন বদলী হলে ও অবৈধ  প্যাথলজি বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি জেলা সিভিল সার্জন অফিস। শুধুমাত্র নোটিশ জারি করে দায়িত্ব সেরেছে। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ প্যথলজি সেন্টার মালিকদের সাথে সিভিল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার মাসিক লেনদেন থাকায়  সাড়ে ৪ বছরে ও উক্ত ল্যাবসমুহ বন্ধের আদেশ র্কাযকর হয়নি বলে সচেতনমহলের ধারনা। অবৈধ ল্যাব সমুহ বন্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ জরুরী।

পাঠকের মতামত: